সহিহ আত-তিরমিজি এর থেকে হাদিস সমূহ

    [] সহিহ আত-তিরমিজি 
এর থেকে হাদিস সমূহ সংগৃহীত []
৫।
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মলত্যাগ করতে যেতেন তখন বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তােমার কাছে জঘন্য (পুরুষ ও স্ত্রী) জিনের (ক্ষতি) হতে আশ্রয় চাই।” শুবা বলেন, তিনি কখনও “আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা”-এর স্থলে “আউযু বিল্লাহ” (আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই) বলতেন।-সহীহ। ইবনু মাজাহ- (২৯৮), বুখারী ও মুসলিম। | আবু ঈসা বলেন ঃ এ অনুচ্ছেদে ‘আলী, যাইদ ইবনু আরকাম, জাবির ও ইবনু মাসউদ (রাঃ)-এর হাদীস রয়েছে। আবু ঈসা বলেন, এ অনুচ্ছেদে আনাসের হাদীস সর্বাধিক সহীহ এবং সর্বোত্তম। যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের সনদে অমিল রয়েছে। হিশাম দাসূতােয়া এবং সা'ঈদ ইবনু আবী ‘আরুবাহ কাতাদাহ হতে বর্ণনা করেছেন। সাঈদ বর্ণনা করেছেন কাসিম ইবনু আউফ শাইবানী হতে তিনি যাইদ ইবনু আরকাম হতে। হিশাম দাসূতােয়াঈ কাতাদাহ হতে তিনি যাইদ ইবনু আরকাম হতে বর্ণনা করেছেন শুবা এবং মামার বর্ণনা করেছেন কাতাদাহ হতে তিনি নাযার ইবনু আনাস হতে। শুবা বলেন, যাইদ ইবনু আরকাম হতে। মা'মার বলেন, নাযার ইবনু আনাস হতে তিনি তার পিতা হতে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে। আবু ঈসা বলেন ঃ আমি ইমাম বুখারীকে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কাতাদা সম্ভবতঃ কাসিম এবং নাযার উভয়ের সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।




৬১৭।
আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে এলাম। তিনি সে সময় কা'বার ছায়াতে বসে ছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি আমাকে সম্মুখে আসতে দেখে বলেনঃ কা'বার প্রভুর শপথ! তারা কিয়ামাতের দিবসে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় হাযির হবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি মনে মনে বললাম, আমার কি হল, মনে হয় আমার প্রসঙ্গে তার উপর কোন কিছু নাযিল হয়েছে। আমি বললাম, আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা নিবেদিত হােক। এধরণের লােক কারা? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অধিক ধনদৌলত আত্মসাকারী, কিন্তু যে। সব লােক এই, এই ও এই পরিমাণ দিয়েছে সে সব লােক ছাড়া। তিনি সামনে, ডানে ও বামে হাতের ইশারা করলেন। অরপর তিনি বললেনঃ | সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন! যে লােক এধরণের উট অথবা গরু রেখে মৃত্যুবরণ করল যার যাকাত সে দেয়নি, কিয়ামতের দিন সেগুলাে পূর্বাবস্থা হতে বেশি মােটাতাজা হয়ে তার নিকটে আসবে এবং নিজেদের পায়ের ক্ষুর দ্বারা তাকে দলিত করবে এবং শিং দ্বারা তাে মারবে। সবশেষের জন্তুটি চলে যাওয়ার পর আবার প্রথম জন্তুটি ফিনে আসবে। মানুষের সম্পূর্ণ বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত শাস্তির এ ধারা চলতে থাকবে। - সহীহ, তা'লাকুর রাগীব (১/২৬৭) আবু হুরাইরা (রাঃ) হতেও একই রকম হাদীস বর্ণিত আছে। আলী। (রাঃ) বলেন, যাকাত অমান্যকারীকে অভিসম্পাত করা হয়েছে। কাবীসা ইবনু হুলব তার পিতা থেকে, জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। 'আবূ ঈসা বলেন, আবূ যারের হাদীসটি হাসান সহীহ। আবু যার (রাঃ)-এর নাম জুনাব ইবনুস সাকান, কারাে মতে ইবনু জুনাদা। দাহ্হাক ইবনু মুযাহিম বলেন, যার দশ হাজার (দিরহাম) রয়েছে সেই অধিক সম্পদশালী। - সহীহ মাকতু অর্থাৎ যাহহাকের উপর মাওকুফ এই হাদীসের এক রাবী আবদুল্লাহ ইবনু মুনীর মারওয়াযী একজন নিষ্ঠাবান লােক।







৬২১।
সালিম (রাহঃ) হতে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত আছে, সাদকা (যাকাত) প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ফরমান (অধ্যাদেশ) লিখালেন। তাঁর কর্মচারীদের নিকটে এটা পাঠানাের আগেই তিনি মারা যান। তিনি এটা নিজের তরবারির সাথে রেখেছিলেন। তার মৃত্যুর পর আবু বাকার (রাঃ) তা কার্যকর করেন। তিনিও মারা যান। উমার (রাঃ)-ও সে অনুযায়ী কাজ করেন। তারপর তিনিও মারা যান। তাতে লেখা ছিল পাঁচটি উটের জন্য একটি বকরী, দশটি উটের জন্য দুটি বকরী, পনেরটি উটের জন্য তিনটি বকরী এবং বিশটি উটের জন্য চারটি বকরীর যাকাত আদায় করতে হবে। পঁচিশ হতে পঁয়ত্রিশ পর্যন্ত উটের জন্য একটি বিনতু মাখায (একটি পূর্ণ এক বছরের মাদী উট); এর বেশি হলে পয়তাল্লিশ পর্যন্ত (ছত্রিশ হতে পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত) উটের জন্য একটি বিনতু লাবুন (একটি পূর্ণ দুই বছরের মাদী উট); এর বেশি হলে যাট পর্যন্ত (ছিচল্লিশ হতে ষাট পর্যন্ত) উটের জন্য একটি হিক্কাহ (একটি পূর্ণ তিন বছরের মাদী উট); আবার এর বেশি হলে পঁচাত্তর পর্যন্ত (একষট্টি হতে পঁচাত্তর পর্যন্ত) উটের জন্য একটি জাযাআহ (একটি চার বছরের মাদী উট); আরাে বেশি হলে নব্বই পর্যন্ত (ছিয়াত্তর হতে নব্বই পর্যন্ত) উটের জন্য দু'টি বিনতু লাবুন; আরাে বেশি হলে একশত বিশ পর্যন্ত (একানব্বই-একশত বিশ) উটের জন্য দু'টি হিক্কাহ এবং যখন একশত • বিশের বেশি হবে তখন প্রতি পঞ্চাশ উটের জন্য একটি হিক্কাহ এবং প্রতি চল্লিশ উটের জন্য একটি বিনতু লাবুন যাকাত আদায় করতে হবে। ভেড়া বকরীর যাকাত হলঃ চল্লিশ হতে এক শত বিশ পর্যন্ত বকরীর জন্য একটি বকরী; এর বেশি হলে দু’শত পর্যন্ত দুটি বকরী; এর বেশি হলে তিনশত পর্যন্ত বকরীর জন্য তিনটি বকরী; তিনশতর বেশি হলে প্রতি একশত বকরীর জন্য একটি করে বকরী যাকাত আদায় করতে হবে। তারপর বকরীর পরিমাণ আবার একশত পর্যন্ত না পৌছালে (পুনরায়) কোন যাকাত দিতে হবে না। | যাকাতের ভয়ে (একাধিক মালিকানায়) বিচ্ছিন্নগুলােকে একত্র করা। এবং একত্রগুলােকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। এক সাথে দুই শরীকের পশু থাকলে প্রত্যেকে নিজ নিজ অংশের হিসাব করে সঠিকভাবে যাকাত আদায়। করবে। যাকাতে বৃদ্ধ এবং ক্রটিযুক্ত পশু গ্রহণ করা হবে না। - সহীহ, ইবনু মাজাহ (১৭৯৮) যুহরী (রাহঃ) বলেন, সাদকা আদায়কারী আসলে (মালিক) করগুলােকে তিনটি ভাগে ভাগ করবে। একটি ভাগে থাকবে উন্নত মানের বকরী, অন্য ভাগে থাকবে মধ্যম মানের বকরী এবং আর এক ভাগে থাকবে নিকৃষ্ট মানের বকরী। মধ্যম মানের বকরী হতে সাদকা আদায়কারী যাকাত গ্রহণ করবে। যুহরী (রাহঃ) গরুর প্রসঙ্গে কিছু বলেননি। আবু বাকার সিদ্দীক, বাহ ইবনু হাকীম পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদা হতে, আবু যার ও আনাস (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা ইবনু উমারের হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। এই হাদীস অনুসারে সকল ফিক্হবিদ মত গ্রহণ করেছেন। একদল রাবী মারভাবে এ হাদীসটিকে বর্ণনা করেননি। শুধুমাত্র সুফিয়ান ইবনু হুসাইন মারফু হিসাবে এটাকে বর্ণনা করেছেন।




৬২২।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ত্রিশটি গরুর যাকাত (দিতে হবে) একটি এক বছরের এড়ে বাছুর অথবা বকনা বাছুর। চল্লিশটি গরুর | যাকাত (দিতে হবে) একটি দুই বছরের বাছুর। - সহীহ, ইবনু মাজাহ (১৮০৪) | মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, আব্দুস সালাম ইবনু হারব খুসাইফ হতে হাদীসটি এভাবেই বর্ণনা করেছেন। আবদুস সালাম নির্ভরযােগ্য এবং স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন একজন বর্ণনাকারী। শারীক এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন খুসাইফ হতে, তিনি আবু উবাইদাহ হতে, তিনি তার পিতা আব্দুল্লাহ হতে, আবু উবাইদা ইবনু আবদুল্লাহ তাঁর পিতার নিকট কোন প্রকার হাদীস শুনেননি।





>f~~
~-Ns~~
{
I
~
~
\5l1<l'i~I~
(1ftg)
~
~~,
~1I~GJ>~1~
'"'"jOjlr=rttll<=tt1'1=I~
\5llql~& 1S~1:>jlttlls:j
<l0il'~'1
g ~
~
C<l'M
~'t
(9fR
~)
CiMBf~<mf, ~~
~'t1S
(9fR<Pm)
~
I
~~,
~
-m-~ (~~~~


৬৩৬।
মাহমুদ ইবনু গাইলান আবু দাউদ হতে, তিনি শুবা হতে তিনি আমাশ হতে, তিনি আবূ ওয়ায়িল হতে তিনি জায়নাবের ভ্রাতুস্পুত্র হতে তিনি আব্দুল্লাহর স্ত্রী যাইনাব হতে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে উপরের হাদীসের মত হাদীস বর্ণনা করেছেন......। এই বর্ণনাটি পূর্ববর্তী বর্ণনার চেয়ে অনেক বেশি সহীহ্। | আবু মুআবিয়া সন্দেহে পতিত হয়ে বলেছেন, যাইনাবের ভাইয়ের ছেলের নিকট হতে আমর ইবনু হারিস বর্ণনা করেছেন। অথচ সঠিক হলআমর ইবনু হারিস যাইনাবের ভাইয়ের ছেলে। আমর ইবনু শুআইব হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত আছেঃ গহনাপত্রের যাকাত আদায় করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন। অবশ্য এ হাদীসের সনদ প্রসঙ্গে সমালােচনা আছে। | আলিমগণের মধ্যে অলংকারপত্রের যাকাত আদায়ের ব্যাপারে মতবিরােধ আছে। একদল সাহাবা ও তাবিঈ বলেছেন, অলংকারাদির যাকাত আদায় করতে হবে, তা স্বর্ণের কিংবা রূপারই হােক না কেন। সুফিয়ান সাওরী, ও ইবনুল মুবারাকের একই রকম মত। আরেক দল সাহাবা, যেমন ইবনু উমার, আইশা, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ ও আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেছেন, অলংকারাদির উপর যাকাত আদায় করা ওয়াজিব নয়। কয়েকজন ফিকহবিদ তাবিঈ হতেও একইরকম বর্ণিত আছে। ইমাম মালিক, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক এরকমই মত প্রকাশ করেছেন।


 ২০১০।
আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস আল-মুযানী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উত্তম আচরণ, দৃঢ়তা-স্থিরতা ও মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে নবুওয়াতের চব্বিশ ভাগের একভাগ। হাসান, রাওযুন নাযীর (৩৮৪), তা'লীকুর রাগীব (৩/৬)। আবু ঈসা বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান গারীব। কুতাইবা-নূহ ইবনু কাইস হতে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনু ইমরান হতে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) হতে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে (উপরের হাদীসের) একইরকম বর্ণনা করেছেন। এই সূত্রটিতে আসিমের উল্লেখ নেই। কিন্তু নাসর ইবনু আলীর হাদীসটিই সহীহ।

 ২০০৮।
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লােক আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি হাসিলের আশায় কোন অসুস্থ লােককে দেখতে যায় অথবা নিজের ভাইয়ের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করতে যায়, একজন ঘােষক (ফিরিশতা) তাকে ডেকে বলতে থাকেন ও কল্যাণময় তােমার জীবন, কল্যাণময় তােমার এই পথ চলাও। তুমি তাে জান্নাতের মধ্যে একটি বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নিলে। হাসান, মিশকাত (৫০১৫)। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আবু সিনানের নাম ঈসা ইবনু সিনান। হাম্মাদ ইবনু সালামা-সাবিত হতে, তিনি আবু রাফি হতে, তিনি আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এইরকম কিছু বর্ণনা করেছেন।

২০২৩।
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতের দরজাগুলাে সােমবার ও বৃহস্পতিবার খুলে দেয়া হয়। যেসব পাপী আল্লাহ্ তা'আলার সাথে অংশীদারিত্ব স্থাপন করেনি তাদেরকে মাফ করে দেয়া হয়। কিন্তু পরস্পর সম্পর্ক ছিন্নকারীর ব্যাপারে (আল্লাহ তা'আলা বলেন) ঃ এদেরকে ফিরিয়ে দাও যে পর্যন্ত না এরা নিজেদের মধ্যে সমঝােতা স্থাপন করে । সহীহ, ইরওয়া (৩/১০৫), গাইয়াতুল মারাম (৪১২), মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। কোন কোন হাদীসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে ঃ “এদের উভয়ের বিষয়টি মুলতবি রাখ যে পর্যন্ত না নিজেদের পারস্পরিক সম্পর্ক সংশােধন করে নেয়।” “আল-মুহতাজিরাইনি” বলতে এমন দুইজনকে বুঝানাে হয়েছে, যারা পরস্পর সম্পর্ক ছিন্ন করে একজন অন্যজনের প্রতি শত্রুতা পােষণ করে। এটি ঐ হাদীসের মতাে যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “কোন মুসলমান ব্যক্তির পক্ষে তিনদিনের বেশি সময় তার ভাইকে ছেড়ে থাকা বৈধ নয়”।



২০১৫।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি দশবছর যাবতকাল ধরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেবা-যত্ন করেছি। তিনি আমার প্রতি কখনাে ‘উহ্ শব্দটিও উচ্চারণ করেননি (অসন্তোষ প্রকাশ করেননি)। তিনি আমার কোন কাজে কখনাে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেননি যে, এটা তুমি করলে কেন অথবা কোন কাজ ছুটে যাওয়ার কারণেও তিনি বলেননি যে, এটা তুমি কেন করলে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সবচাইতে উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মানুষ। আমি রেশম এবং পশম মিশিয়ে বানানাে কাপড়ও নিজ হাতে ছুয়ে দেখেছি এবং খাঁটি রেশমী কাপড়ও ছুয়েছি কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতের চেয়ে অধিক নরম ও মসূন কোন কিছু স্পর্শ করিনি। আমি মৃগনাভির গন্ধও গ্রহণ করেছি এবং আতরের গন্ধও গ্রহণ করেছি কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীরের ঘামের চেয়ে অধিক সুগন্ধ কোন কিছুতেই পাইনি। সহীহ, মুখতাসার শামা-ইল (২৯৬), বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, আইশা ও বারাআ (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহীহ্।।



 ২০১৮।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তােমাদের যে ব্যক্তির চরিত্র ও আচরণ সর্বোত্তম তােমাদের মধ্যে সে-ই আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় এবং কিয়ামত দিবসেও আমার খুবই নিকটে থাকবে। তােমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আমার নিকট সবচেয়ে বেশি ঘৃণ্য সে ব্যক্তি কিয়ামত দিবসে আমার নিকট হতে অনেক দূরে থাকবে তারা হলাে ঃ বাচাল, ধৃষ্ট-নির্লজ্জ এবং অহংকারে মত্ত ব্যক্তিরা। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! বাচাল ও ধৃষ্ট-দাম্ভিকদের তাে আমরা জানি কিন্তু মুতাফাইহিন কারা? তিনি বললেন ঃ অহংকারীরা। সহীহ, সহীহাহ (৭৯১)। আবু ঈসা বলেন, আবু হুরাইরা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান ও উপরােক্ত সূত্রে গারীব। একদল বর্ণনাকারী তাদের বর্ণনায় আবদু রব্বিহি ইবনু সাঈদের নাম উল্লেখ করেননি। তারা সরাসরি মুবারাক ইবনু ফালার মাধ্যমে মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির হতে জাবির (রাঃ)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। এই সূত্রটিই অনেক বেশি সহীহ্। “আস-সারসার' যে লোেক বেশি কথা বলে (বাচাল)। আল-মুতাশাদ্দিক। মানুষের সামনে যে লােক লম্বা লম্বা কথা বলে বেড়ায়, ধৃষ্টতাপূর্ণ ও অশালীন উক্তি করে, নির্লজ্জ ও দাম্ভিকতাপূর্ণ কথা বলে।

 ১৯৮৯।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের (ছােটদের) সাথে মিশতেন। এমনকি আমার ছােট ভাইটিকে তিনি কৌতুক করে বলতেন ? হে আবু উমাইর! কি করেছে নুগাইর (ছােট্ট পােষা পাখি)। সহীহ, বুখারী ও মুসলিম। ৩৩৩ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। হান্নাদ-ওয়াকী হতে, তিনি শুবা হতে, তিনি আবুত তাইয়্যাহ হতে, তিনি আনাস (রাঃ) হতে একইরকম বর্ণনা করেছেন। আবুত তাইয়্যাহ্-এর নাম ইয়াযীদ, পিতা হুমাইদ আয-যুবাই। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্।


 ২০০৬।
আবুল আহ্ওয়াস (রাহঃ) হতে তার বাবার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমি কোন লােককে অতিক্রম করি, সে আমাকে পানাহার করায় না, মেহমানদারীও করে না। যদি ঐ লােকটি আমাকে অতিক্রম করে, আমি কি একইভাবে তার প্রতিশােধ গ্রহণ করতে পারি? তিনি বললেনঃ না, তুমি তার মেহমানদারী কর। (বর্ণনাকারী বলেন) আমাকে খুবই পুরাতন পােশাক পরে থাকতে দেখে তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তােমার ধন-দৌলত আছে কি? আমি বললাম, আল্লাহ তা'আলা আমাকে উট, ছাগল-ভেড়া প্রভৃতি সকল প্রকার সম্পদই দিয়েছেন। তিনি বললেনঃ তা তােমার শরীরে পরিলক্ষিত হওয়া উচিত। সহীহ, গাইয়াতুল মারাম (৭৫), সহীহাহ্ (১৩২০)। আবু ঈসা বলেন, আইশা, জাবির ও আবু হুরাইরা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবুল আহওয়াসের নাম আওফ, পিতা মালিক ইবনু নাযলা আল-জুশামী। “ইকরিহি” অর্থ তাকে আতিথ্য প্রদর্শন কর। “আল-কিরা” অর্থ “আতিথেয়তা”।


 ১৯৯৯।
আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকারও আছে সে জান্নাতে যেতে পারবে না। আর যে ব্যক্তির অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমানও আছে সে জাহান্নামে যাবে না। তখন একজন বলল, আমার নিকট এটা তাে খুবই পছন্দনীয় যে, আমার জামা-কাপড় সুন্দর হােক এবং আমার জুতা জোড়াও সুন্দর হােক। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা অবশ্যই সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। কোন ব্যক্তির সদর্পে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করাই হলাে অহংকার। সহীহ, সহীহাহ (১৬২৬), মুসলিম। “যে ব্যক্তির অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমানও আছে সে ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে না” শীর্ষক হাদীসের ব্যাখ্যায় একদল মুহাদ্দিস বলেন, সে জাহান্নামে স্থায়ী হবে না (আযাবের পর মুক্তি পাবে)। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেনঃ “যার অন্তরে অনুপরিমাণ ঈমানও আছে তাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে”। “হে আমাদের প্রভু! তুমি যে ব্যক্তিকে জাহান্নামে দাখিল করাবে তাকে তুমি অপমান করলে” শীর্ষক আয়াতের ব্যাখ্যায় একদল তাবিঈ বলেন, যে ব্যক্তিকে তুমি চিরস্থায়ী জাহান্নামী করলে তাকে তুমি | চরম অপমানিত করলে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব।



 ১৯৮২।
যিয়াদ ইবনু ইলাকা (রাহ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিদেরকে তােমরা গালি দিও না, (যদি দাও) তাহলে জীবিতদেরই কষ্ট দিলে। সহীহ, রাও (৩৫৭), তা'লীকুর রাগীব (৪/১৩৫), সহীহাহ (২৩৭৯) | আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি বর্ণনায় সুফিয়ানের শাগরিদগণ দ্বিমত পােষণ করেছেন। তাদের কেউ কেউ আল-হাফারীর রিওয়ায়াতের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন এবং অনেকে বলেছেন, সুফিয়ান-যিয়াদ ইবনু ইলাকা হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে মুগীরা ইবনু শুবার নিকট (রাঃ)-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সূত্রে একইরকম হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি।


১৯৬৯।
সাফওয়ান ইবনু সুলাইম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিধবা ও মিসকীনদের ভরণ-পােষণের জন্য চেষ্টা সাধনকারী আল্লাহ তা'আলার পথে জিহাদকারী অথবা সারাদিন রােযা পালনকারী ও সারারাত নামায আদায়কারীর সমান সাওয়াবের অধিকারী। সহীহ, ইবনু মাজাহ (২১৪০), বুখারী ও মুসলিম। আল-আনসারী-মা'ন হতে, তিনি মালিক হতে, তিনি সাওর ইবনু যাইদ হতে, তিনি আবুল গাইস হতে, তিনি আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে (উপরের) হাদীসের ন্যায় বর্ণনা করেছেন। | এ হাদীসটি হাসান গারীব সহীহ। আবুল গাইস-এর নাম সালিম, আবদুল্লাহ ইবনু মুতী’র মুক্তদাস। সাওর ইবনু যাইদ মাদীনার অধিবাসী এবং সাওর ইবনু ইয়াযীদ সিরিয়ার অধিবাসী।


১৯৭১।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তােমরা অবশ্যই সত্যের পথ অবলম্বন করবে। কেননা, সততাই মানুষকে কল্যাণের পথে নিয়ে যায়। আর কল্যাণ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। কোন মানুষ প্রতিনিয়ত সত্য কথা বলতে থাকলে এবং সত্যের প্রতি মনােযােগী থাকলে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহ তাআলার দরবারে পরম সত্যবাদী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয় । তােমরা মিথ্যাকে অবশ্যই পরিহার করবে। কেননা, মিথ্যা (মানুষকে) পাপের পথ দেখায়, আর পাপ জাহান্নামের পথে নিয়ে যায়। কোন বান্দাহ প্রতিনিয়ত মিথ্যা বলতে থাকলে এবং মিথ্যার প্রতি ঝুঁকে থাকলে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহ তা'আলার দরবারে চরম মিথ্যাবাদী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়। সহীহ, বুখারী ও মুসলিম। আবূ বাকর সিদ্দীক, উমার, আবদুল্লাহ ইবনুশ শিখখীর ও ইবনু উমার (রাঃ) হতেওঁ এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্।।



১৯৮৪।
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতের মধ্যে একটি বালাখানা (প্রাসাদ) আছে। এর ভিতর হতে বাইরের এবং বাহির হতে ভিতরের দৃশ্য দেখা যায়। এক বিদুঈন (গ্রাম্যলােক) দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! এই বালাখানা কোন ব্যক্তির জন্য? তিনি বললেন : যে লােক মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা। বলে, ক্ষুধার্তকে খাদ্য দেয়, সর্বদা রােযা পালন করে এবং মানুষ যখন রাতে ঘুমিয়ে থাকে তখন আল্লাহ্ তা'আলার উদ্দেশ্যে নামায আদায় করে তার জন্য। হাসান, মিশকাত (২৩৩৫), তা'লীকুর রাগীব (২/৪৬)। | আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা এ হাদীস প্রসঙ্গে শুধুমাত্র আবদুর রাহমান ইবনু ইসহাকের সূত্রেই জেনেছি। এই আবদুর রাহমানের স্মরণশক্তি সম্পর্কে কোন কোন হাদীস বিশারদ সমালােচনা করেছেন। তিনি কূফার বাসিন্দা। আর আবদুর রাহমান ইবনু ইসহাক আল-কুরাশী একজন মাদীনার অধিবাসী। তিনি পূর্বোক্তজনের চাইতে বেশি বিশ্বস্ত ও নির্ভরযােগ্য। তারা উভয়ে ছিলেন সমসাময়িক।




১৯৮৭।
আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন ঃ তুমি যেখানেই থাক আল্লাহ তা'আলাকে ভয় কর, মন্দ কাজের পরপরই ভাল কাজ কর, তাতে মন্দ দূরীভূত হয়ে যাবে এবং মানুষের সাথে উত্তম আচরণ কর। হাসান, মিশকাত (৫০৮৩), বাওযুন নাযীর (৮৫৫)। আবু হুরাইরা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। মাহমূদ ইবনু গাইলান-আবু আহমাদ হতে, তিনি আবু নুআইম হতে, তিনি সুফিয়ান হতে, তিনি হাবীব (রাহঃ) হতে এই সূত্রে একইরকম বর্ণনা করেছেন। মাহমূদ-ওয়াকী হতে, তিনি সুফিয়ান হতে, তিনি হাবীব ইবনু আবী সাবিত হতে, তিনি মাইমূন ইবনু আবী শাবীব হতে, তিনি মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে একইরকম বর্ণনা করেছেন। মাহমুদ বলেন, আবু যার (রাঃ)-এর হাদীসটি সহীহ।।



১৯৬৭।
আবু শুরাইহ আল আদাবী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমার উভয় চোখ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছে এবং আমার উভয় কান তাঁকে বলতে শুনেছে। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি যে লােক ঈমান রাখে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে, তাকে জা-ইযা দেয়। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন, জা-ইযা কি? তিনি বলেনঃ একদিন ও একরাতের পাথেয় সাথে দেয়া। তিনি আরাে বলেন ঃ মেহমানদারী তিনদিন পর্যন্ত। এর অতিরিক্তটুকু সাদকারূপে গণ্য। আল্লাহ তা'আলা ও আখিরাতের উপর সে লােক ঈমান রাখে যে যেন উত্তম কথা বলে, আর না হয় চুপ থাকে। সহীহ, ইবনু মাজাহ (৩৬৭৫), বুখারী ও মুসলিম। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।



১৯৬৬।
সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন লােক তার দীনারগুলাের মধ্যে যেটি তার পরিবারের জন্য ব্যয় করে, যে দীনারটি সে আল্লাহ তা'আলার পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে তার পশুর জন্য ব্যয় করে এবং যে দীনারটি সে আল্লাহ্ তা'আলার পথে তার মুজাহিদ সঙ্গীর জন্য ব্যয় করে, তা-ই সর্বোত্তম দীনার। আবু কিলাবা তার বর্ণনায় বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বক্তব্য শুরু করেন পরিবার-পরিজন হতে। তারপর তিনি বলেন ঃ যে লােক তার নিজের ছােট ছােট সন্তানদের জন্য ব্যয় করে, | বিরাট সাওয়াবের ব্যাপারে তার চেয়ে বেশি বড় আর কে আছে? আল্লাহ তার মাধ্যমে এদের মান-ইজ্জাত ও সম্মান-ভ্রম রক্ষা করেন এবং তার ওয়াসীলায় এদের স্বনির্ভর করেন। সহীহ, ইবনু মাজাহ (২৭৬০), মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্।



১৯৬৮।
বু শুরাইহ আল-কাবী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মেহমানদারী তিনদিন পর্যন্ত এবং জা-ইযা হল একদিন ও একরাতের পাথেয় প্রদান। এরপর তার জন্য যা ব্যয় করা হবে তা সাদকারূপে গণ্য। অতিথিসেবক বিরক্ত হতে পারে। কোন মেহমানের পক্ষেই এতটা সময় সেখানে থাকা বৈধ নয়।
সহীহ, তা'লীকুর রাগীব (৩/২৪২), বুখারী ও মুসলিম। আইশা ও আবু হুরাইরা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি সাঈদ আল-মাকবুরীর সূত্রে মালিক ইবনু আনাস ও লাইস (রাহঃ) বর্ণনা করেছেন। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবু শুরাইহ আল-খুযাঈ হলেন আল-কাবী। আর তিনিই আল-আদাবী, তার নাম খুওয়াইলিদ, পিতা আমর। “লা ইয়াসবী ইনদাহু” কথার মর্ম এই যে, মেহমানের এত দিন কোন পরিবারে থাকা যুক্তিসঙ্গত নয় যাতে তারা কষ্টের মধ্যে পতিত হয় এবং বিরক্তির কারণ হতে পারে। “হারাজ” অর্থ সংকট। “হাত্তা ইউরিজাহু” কথার অর্থ এই যে, অনেকদিন থেকে সংশ্লিষ্ট পরিবারের জন্য মেহমান সংকট তৈরী করল।



 ১৯৪৫।
আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এরা তােমাদের ভাই, এদেরকে আল্লাহ তা'আলা তােমাদের অধীনস্থ করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তির এরূপ ভাই (গােলাম, বাঁদী, খাদিম) তার অধীনে আছে, সে যেন তার খাদ্য হতে তাকে খেতে দেয় এবং তার পােশাক-পরিচ্ছদ হতে তাকে পরতে দেয়। সে এরূপ কাজের বােঝা যেন তার উপর না চাপায় যা করতে সে সমর্থ নয়। সে তার উপর সাধ্যাতীত কোন কাজের বােঝা চাপিয়ে দিলে সে যেন তাকে সহযােগিতা করে। সহীহ, বুখারী, মুসলিম। | আলী, উম্মু সালামা, ইবনু উমার ও আবু হুরাইরা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্।



১৯৩২।
আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলমান ব্যক্তির জন্য তিনদিনের বেশি সময় ধরে তার ভাইয়ের সাথে কথা-বার্তা ও মেলামেশা ত্যাগ করা জায়িয নয়। তাদের দুজনের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ হয়, অথচ একজন এদিকে এবং অন্যজন আরেক দিকে মুখ সরিয়ে নেয়। তাদের দুজনের মধ্যে যে ব্যক্তি প্রথমে সালাম দেয় সে-ই উত্তম। সহীহ, ইরওয়া (২০২৯), বুখারী, মুসলিম। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ, আনাস, আবু হুরাইরা, হিশাম ইবনু আমির ও আৰূ হিন্দ আদ-দারী (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। | আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্।।


১৯৩৪।
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! গীবত কি? তিনি বললেনঃ তােমার ভাইয়ের প্রসঙ্গে তােমার এমন ধরনের কথা-বার্তা বলা যা সে অপছন্দ করে। প্রশ্নকারী বলল, আমি যে কথাগুলাে বলি তা প্রকৃতপক্ষেই তার মধ্যে নিহিত থাকলে, এক্ষেত্রে আপনার কি মত? তিনি বললেন ঃ তুমি যে কথাগুলাে বল তা প্রকৃতই তার মধ্যে নিহিত থাকলে তবেই তাে তুমি তার গীবত করলে। তুমি যা বল তার মধ্যে যদি সেগুলাে না থাকে তাহলে তুমি তাকে মিথ্যা অপবাদ দিলে। সহীহ, গাইয়াতুল মারাম (৪২৬), নাকদুল কাৰাণী (৩৬), সহীহাহ (২৬৬৭), মুসলিম। আবু বার, ইবনু উমার ও আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।



১৯৪৩
মুজাহিদ (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর জন্য তার পরিবারে একটি ছাগল যবেহ করা হল। তিনি এসে বললেন, তােমরা কি আমাদের ইয়াহুদী প্রতিবেশীকে (গােশত) উপহার পাঠিয়েছ? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি ঃ প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে জিবরাঈল (আঃ) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হল যে, হয়ত শীঘ্রই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবে। সহীহ, ইরওয়া (৮১১), বুখারী। এ অনুচ্ছেদে আইশা, ইবনু আব্বাস, আবূ হুরাইরা, আনাস, মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ, উকবা ইবনু আমির, আবূ শুরাইহ ও আবু উমামা (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান এবং উল্লেখিত সনদসূত্রে গারীব। এ হাদীসটি-আইশা ও আবু হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন।



১৯৩৩।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আবদুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ) মাদীনায় পৌছানাের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এবং সা'দ ইবনুর রাবী (রাঃ)-এর মধ্যে | ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করে দেন। সা'দ (রাঃ) তাকে বললেন, আসুন। আমার সম্পদ উভয়ে অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করে নিই। আমার দুজন স্ত্রী। আছে। আমি তাদের একজনকে তালাক দেই এবং সে তার ইদ্দাত পূর্ণ করলে আপনি তাকে বিয়ে করে ফেলুন। আবদুর রাহমান (রাঃ) বললেন, আপনাকে আপনার ধন-দৌলতে ও পরিবার-পরিজনে আল্লাহ তা'আলা | বারকাত দান করুন। আপনারা আমাকে বাজারের পথটি দেখিয়ে দিন । তারা তাকে বাজারের পথটি দেখিয়ে দিলেন। সেদিন বাজার হতে তিনি লাভম্বরূপ কিছু পনির ও ঘি নিয়ে ফিরে আসেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন তার শরীরে হলুদ রং-এর চিহ্ন দেখে বললেন, কি ব্যাপার? তিনি বললেন, আমি একজন আনসার মহিলাকে বিয়ে করেছি। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন। মােহরানা হিসেবে | কি দিয়েছ? তিনি বললেন, খেজুর বীচি (পরিমাণ স্বর্ণ)। হুমাইদ বলেনঃ অথবা তিনি বলেছেন, এক খেজুর বীচি পরিমাণ স্বর্ণ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বিবাহ ভােজের ব্যবস্থা কর তা একটি | ছাগল দিয়ে হলেও। সহীহ, ইবনু মাজাহ (১৯০৭), বুখারী, মুসলিম। তবে তাতে সা'দ ও আব্দুর রহমানের ঘটনার উল্লেখ নেই। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। ইমাম আহমাদ (রাহঃ) বলেন, একটি খেজুর বীচির সমপরিমাণ স্বর্ণের ওজন হচ্ছে সােয়া তিন | দিরহাম। ইমাম ইসহাক (রাহঃ) বলেন, একটি খেজুর বীচির সমপরিমাণ স্বর্ণের ওজন হচ্ছে পাঁচ দিরহাম। আমি এই তথ্যটি পেয়েছি ইমাম আহমাদ ও ইসহাক (রাহঃ) হতে ইসহাক ইবনু মনসূরের মধ্যস্থতায় ।




 ১৯১১।
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আল-আকরা ইবনু হাবিস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলেন যে, তিনি হাসানকে চুমু খাচ্ছেন। ইবনু আবী উমার তার বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন যে, তিনি হাসান অথবা হুসাইনকে চুমু খেয়েছেন। আল-আকরা (রাঃ) বলেন, আমার দশটি সন্তান আছে কিন্তু আমি তাদের কাউকে কখনাে চুমু দেইনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ঃ যে ব্যক্তি দয়া-অনুগ্রহ করে না সে দয়া-অনুগ্রহপ্রাপ্ত হয়। না। সহীহ, তাখরীজ “মুশকিলাতুল ফার" (১০৮), বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, আনাস ও আইশা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু সালামার নাম আবদুল্লাহ, পিতা আবদুর | রাহমান। এ হাদীসটি হাসান সহীহ।




 ১৯১৯।
যারবী (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি ঃ একজন বয়স্ক লােক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে আসে। লােকেরা তার জন্য পথ ছাড়তে বিলম্ব করে। (তা দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ঃ যে লােক আমাদের শিশুদের আদর করে না এবং আমাদের বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। সহীহ, সহীহাহ (২১৯৬)। আবদুল্লাহ ইবনু আমর, আবু হুরাইরা, ইবনু আব্বাস ও আবূ উমামা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আনাস (রাঃ) এবং অন্যান্য সাহাবী হতেও যারবীর বেশ কিছু মুনকার হাদীস রয়েছে।



১৯৪৭।
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, তাওবাহকারী আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যদি তার নির্দোষ গােলামের বিরুদ্ধে (যিনার) অপবাদ আরােপ করে তবে আল্লাহ তা'আলা কিয়ামত দিবসে তার উপর হদ্দ (নির্ধারিত শাস্তি) প্রতিষ্ঠিত করবেন। তবে গােলামটি যদি প্রকৃতপক্ষেই সেরকমের হয় তাহলে ভিন্ন কথা। সহীহ, রাওযুন নাযীর (১১৪৬), বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহু। ইবনু আবী মুম-এর নাম আবদুর রাহমান ইবনু আবী নুম আল-বাজালী, উপনাম আবুল হাকাম। সুওয়াইদ ইবনু মুকাররিন ও আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীসটি বর্ণিত আছে।



১৯১৫।
আইশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একজন মহিলা তার দুই মেয়েসহ আমার নিকটে এল এবং আমার কাছে কিছু চাইল। কিন্তু একটি খেজুর ব্যতীত আমার নিকটে আর কিছুই ছিল না। আমি সেটিই তাকে দিলাম । সে খেজুরটিকে ভাগ করে তার দুই মেয়ের হাতে দিল এবং নিজে মােটেও খেল না। তারপর সে উঠে চলে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে আসার পর আমি বিষয়টি তাকে অবহিত করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ঃ যে লােক মেয়ে সন্তানদের নিয়ে এ ধরনের পরীক্ষার (বিপদের) সম্মুখীন হয়, তারা তার জন্য জাহান্নামের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে। সহীহ, তা'লীকুর রাগীব (৩৮৩), মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এই সনদ সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনু উবাইদ মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল আযীয হতে একাধিক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি তার বর্ণনায় বর্ণনাকারীর নাম আবূ বাকর ইবনু উবাইদুল্লাহ ইবনু আনাস উল্লেখ করেছেন। সঠিক হল উবাইদুল্লাহ ইবনু আবী বাকর ইবনু আনাস।



 ১৯০৮।
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সমানুরূপ ব্যবহারের মনােভাব নিয়ে সম্পর্ক রক্ষাকারী আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী নয়, বরং কেউ কোন ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক নষ্ট করলেও সে যদি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে তবে সে-ই হচ্ছে প্রকৃত সম্পর্ক স্থাপনকারী। | সহীহ, গাইয়াতুল মারাম (৪০৪), সহীহ আবু দাউদ (১৪৮৯), বুখারী, মুসলিম। * আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সালমান, আইশা ও আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।



১৮৯৯।
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ঃ বাবার সন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি এবং বাবার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহ্ তা'আলার অসন্তুষ্টি রয়েছে। সহীহ, সহীহা (৫১৫) উপরােক্ত হাদীসের মতাে হাদীস মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার-মুহাম্মাদ ইবনু জাফর হতে, তিনি শুবা হতে, তিনি ইয়ালা ইবনু আতা হতে, তিনি তার পিতা-আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে এই সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। এটাকে তিনি মারফু হাদীস হিসেবে বর্ণনা করেননি এবং এটাই অনেক বেশি সহীহ। | আবু ঈসা বলেন, এটিকে শুবার সঙ্গীগণ একইভাবে মাওকুফ হিসেবে শুবা হতে, তিনি ইয়ালা ইবনু আতা হতে, তিনি তার পিতা-আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এটা শুবার সূত্রে মারফু (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী) হিসাবে শুধু খালিদ ইবনুল হারিস (রাহঃ) বর্ণনা করেছেন। খালিদ ইবনুল হারিস একজন সিকাহ ও বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী। মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না বলেন, আমি বসরায় খালিদের সমতুল্য এবং কূফায় আবদুল্লাহ ইবনু ইদরীসের মতাে যােগ্য কোন ব্যক্তিকে দেখিনি। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতেও এ। অনুচ্ছেদে হাদীসটি বর্ণিত আছে।



১৯০৫।
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন প্রকারের দু'আ অবশ্যই মঞ্জুর করা হয়, তাতে কোনরকম সন্দেহ নেই। নির্যাতিত ব্যক্তির দু'আ, মুসাফিরের দু'আ এবং সন্তানের প্রতি বাবার বদ-দু'আ। হাসান, ইবনু মাজাহ (৩৮৬২)। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি ইয়াহইয়া ইবনু আবী কাসীরের সূত্রে হাজ্জাজ আস-সাওয়াফ হিশামের রিওয়ায়াতের মতােই বর্ণনা করেছেন। আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে যে আবু জাফার হাদীসটি বর্ণনা করেন তিনি হলেন আবু জাফার আল-মুআযিন। তার নাম সম্পর্কে আমরা অজ্ঞ। ইয়াহইয়া ইবনু আবী কাসীরও তার সূত্রে একাধিক হাদীস বর্ণনা করেছেন।



১৯০১।
আবদুর রাহমান ইবনু আবী বাকরা (রাঃ) হতে তার বাবার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি (আবূ বাকরা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি তােমাদেরকে সর্বাধিক কাবীরা গুনাহের ব্যাপারে জানিয়ে দিবাে না? সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! অবশ্যই জানিয়ে দিন। তিনি বললেন ঃ আল্লাহ তা'আলার সাথে অংশীদারিত্ব স্থাপন করা এবং বাবা-মায়ের অবাধ্য হওয়া। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। তিনি সােজা হয়ে বসেন এবং বলেন ঃ এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া ও মিথ্যা বলা। একথাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবিরতভাবে বলতে থাকেন। আমরা (মনে মনে) বলতে লাগলাম, আহা! তিনি যদি থামতেন, চুপ করতেন! সহীহ, গাইয়াতুল মারাম (২৭৭), বুখারী, মুসলিম আবু সাঈদ (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবু বাকরার নাম নুফাই, পিতা আল-হারিস।



১৯০৭।
আবু সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আবুর বাদ্দাদ (রাঃ) একবার অসুস্থ হলে তাকে আবদুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ) দেখতে আসেন। আবুর রাদ্দাদ (রাঃ) বলেন, আমার জানামতে সবচেয়ে উত্তম ও সর্বাধিক আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রক্ষাকারী ব্যক্তি হলেন আবু মুহাম্মাদ (আবদুর রাহমান)। আবদুর রাহমান (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি ? পরিপূর্ণ কল্যাণ ও প্রাচুর্যের অধিকারী আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ 'আমিই আল্লাহ এবং আমিই রাহমান। আত্মীয়তার সম্পর্ককে আমিই সৃষ্টি করেছি এবং আমার নাম হতে নির্গত করে এই নাম (রাহমান হতে রেহেম) রেখেছি। যে ব্যক্তি এই সম্পর্ক বহাল রাখবে আমিও তার সাথে (রাহমাতের) সম্পর্ক বহাল রাখব। আর এই সম্পর্ক যে ব্যক্তি ছিন্ন করবে আমিও তার হতে (রাহমাতের) সম্পর্ক ছিন্ন করব”। সহীহ, সহীহাহ (৫২০)। আবু সাঈদ, ইবনু আবী আওফা, আমির ইবনু রাবীআ, আবু হুরাইরা ও জুবাইর ইবনু মুতঈম (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, যুহরীর সুত্রে আবু সুফিয়ান কতৃক বর্ণিত হাদীসটি সহীহ। মামার এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন যুহরী হতে, তিনি আবু সালামা হতে, তিনি রাদ্দাদ আল লাইসী হতে, তিনি আবদুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ)-এর সূত্রে। মুহাম্মদ বলেন, মামার বর্ণিত রিওয়ায়াতটিতে তুল আছে।




 ১৮৬৫।
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দ্রব্যের বেশি পরিমাণ (পান করলে) নেশার সৃষ্টি করে, তার অল্প পরিমাণও (পান করা) হারাম। হাসান সহীহ, ইবনু মাজাহ (৩৩৯৩) সা’দ, আইশা, আবদুল্লাহ ইবনু আমর, ইবনু উমার ও খাওওয়াত ইবনু জুবাইর (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। জাবির (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস হিসেবে এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন।




১৮৬৭ ।
তাউস (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে, ইবনু উমার (রাঃ)-এর নিকট একজন লােক এসে প্রশ্ন করল, সবুজ কলসে বানানাে নাবীয পান করতে কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যা। তাউস (রাহঃ) বলেন, আল্লাহ্ তা'আলার শপথ! আমি এটা ইবনু উমার (রাঃ)-এর নিকটেই শুনেছি। সহীহ, মুসলিম ইবনু আবী আওফা, আবু সাঈদ, সুয়াইদ, আইশা, ইবনুয যুবাইর ও ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীসটি বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন ।




১৮৯৭।
বাহ ইবনু হাকীমের দাদা (মুআবিয়া ইবনু হাইদা রাঃ.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! কোন্ ব্যক্তির সাথে আমি উত্তম আচরণ করব? তিনি বললেন ঃ তােমার মায়ের সাথে। আমি প্রশ্ন করলাম, এরপর কার সাথে? তিনি বললেনঃ তােমার মায়ের সাথে । আমি আবার প্রশ্ন করলাম, এরপর কার সাথে? তিনি বললেন ঃ তােমার মায়ের সাথে । আমি আবার প্রশ্ন করলাম, এরপর কার সাথে? তিনি বললেন : তারপর তােমার বাবার সাথে, তারপর নিকটাত্মীয়তার ক্রমানুসারে উত্তম আচরণ করবে। হাসান, মিশকাত (৪৯২৯)



১৯২৩।
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি ঃ শুধুমাত্র হৃদয়হীন, নিষ্ঠুর ও দুর্ভাগা মানুষের কাছ থেকেই রাহমাত ছিনিয়ে নেয়া। হাসান, মিশকাত তাহকীক ছানী (৪৯৬৮)। আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে হাদীস বর্ণনাকারী আবু উসমানের নাম অজ্ঞাত। বর্ণিত আছে যে, তিনি মূসা ইবনু আবু উসমানের বাবা, যার নিকট হতে আবুয যিনাদ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবুয যিনাদ (রাহঃ) মূসা ইবনু আবী উসমান হতে, তিনি তার পিতা হতে, তিনি আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সূত্রে একাধিক হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান।



১৯২৪।
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা দয়ালুদের উপর দয়া ও অনুগ্রহ করেন। যারা যমীনে বসবাস করছে তাদের প্রতি তােমরা দয়া কর, তাহলে যিনি আকাশে আছেন তিনি তােমাদের প্রতি দয়া করবেন। দয়া রাহমান হতে উদগত। যে লােক দয়ার সম্পর্ক বজায় রাখে আল্লাহ তা'আলাও তার সাথে নিজ সম্পর্ক বজায় রাখেন। যে লােক দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহ তা'আলাও তার সাথে দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করেন। সহীহ, সহীহাহ্ (৯২২)। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।



১৯২৭।
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : এক মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই। সে তার সাথে কোনরকম বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, ভার প্রসঙ্গে মিথ্যা বলবে না, তাকে অপমান করবে না। প্রত্যেক মুসলমানের মান-সম্মান, ধন-সম্পদ ও রক্তের (জীবনের) উপর হস্তক্ষেপ করা অপর মুসলমানের উপর হারাম। তাক্ওয়া এখানে (অন্তরে)। কেউ মন্দ বলে প্রমাণিত হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার অপর মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করে। সহীহ, ইরওয়া (৮৯৯-১০০), মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আলী ও আবু আইয়ুব (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।



১৯২৬।
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ধর্ম হচ্ছে কল্যাণ কামনার নাম। একথাটি তিনি তিনবার বললেন। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! কার কল্যাণ কামনা করা? তিনি বললেন ঃ আল্লাহ, তাঁর গ্রন্থের, মুসলমানদের নেতৃবর্গের এবং মুসলমান সর্বসাধারণের। সহীহ, ইরওয়া৯ে২৬), গাইয়াতুল মারাম (৩৩২), মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্। ইবনু উমার, তামীম আদ-দারী, জারীর, হাকীম ইবনু আবী ইয়াযীদ তার পিতার সূত্রে এবং ওবান (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।



১৯৩০।
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে তােক কোন মুসলমান লােকের দুনিয়াবী বিপদাপদের মধ্যে একটি বিপদও দূর করে দেয়, আল্লাহ তা'আলা তার পরকালের বিপদাপদের কোন একটি বিপদ দূর করে দিবেন। যে লােক দুনিয়াতে অন্য কারাে অভাব দূর করে দেয়, তার দুনিয়া ও আখিরাতের অসুবিধাগুলােকে আল্লাহ তা'আলা সহজ করে দিবেন। যে লােক দুনিয়ায় কোন মুসলমানের দোষ-ত্রুটিকে গােপন রাখে, আল্লাহ তা'আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ক্রটি গােপন রাখবেন। যে পর্যন্ত ফর্মা নং-৭ বান্দাহ তার ভাইয়ের সাহায্য-সহযােগিতায় নিয়ােজিত থাকে, সে পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলাও তার সাহায্য-সহযােগিতায় নিয়ােজিত থাকেন। সহীহ, ইবনু মাজাহ (১২২৫), মুসলিম। ইবনু উমার ও উকবা ইবনু আমির (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীসটি বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। এ হাদীসের মতাে হাদীস আবু আওয়ানা এবং বর্ণনাকারী আমাশ হতে, তিনি আবূ সালিহ হতে, তিনি আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তবে তারা এই সনদে “হুদ্দিসতু আন আবী সালিহ” কথাটুকু উল্লেখ করেননি।



 ১৯৫৩।
আইশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপহার নিতেন এবং বিনিময়ে উপহার প্রদান করতেন। সহীহ, ইরওয়া (১৬০৩), বুখারী। আবু হুরাইরা, আনাস, ইবনু উমার ও জাবির (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ এবং উল্লেখিত সনদসূত্রে গারীব। এটা মারফু হিসাবে শুধু ঈসা ইবনু ইউনুস হতে হিশামের সূত্রেই জেনেছি।



১৯৪৮।
আবু মাসউদ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, কোন এক সময় আমি আমার এক গােলামকে প্রহার করছিলাম। তখন আমার পিছন হতে একজন লােককে আমি বলতে শুনলাম, আবু মাসউদ, জেনে রাখ, আবু মাসঊদ, জেনে রাখ! আমি পিছনে তাকানাে মাত্রই দেখতে পাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি বললেন ঃ তুমি এর উপর যে পরিমাণ ক্ষমতার অধিকারী, তােমার উপর আল্লাহ তা'আলা এরচাইতে অনেক বেশি ক্ষমতার অধিকারী। আবু মাসউদ (রাঃ) বলেন, এরপর হতে আমি আমার কোন গােলামকে আর কখনাে মারিনি। সহীহ, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবরাহীম | আত-তাইমীর পিতা ইয়াযীদ ইবনু শারীক।



১৯৫৭।
বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি ঃ যে ব্যক্তি একবার দোহন করা দুধ দান করে অথবা টাকা-পয়সা ধার দেয় অথবা পথ হারিয়ে যাওয়া লােককে সঠিক পথের সন্ধান দেয়, তার জন্য রয়েছে একটি গােলাম মুক্ত করে দেয়ার সম-পরিমাণ সাওয়াব। সহীহ, তা'লীকুর রাগীব (২/৩৪,২৪১), মিশকাত (১৯১৭)। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ এবং আবু ইসহাক-তালহা ইবনু মুসাররিফের সূত্রে গারীব। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র এই সূত্রেই জেনেছি। এ হাদীসটি তালহা ইবনু মুসাররিফের সূত্রে মানসূর ইবনুল মু'তামির ও শুবা (রাহঃ) বর্ণনা করেছেন। নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। “মানাহা মানীহাতা ওয়ারিকিন” অর্থ টাকা-পয়সা ধার দেয়া। “হাদা যুককান” অর্থ সঠিক পথের সন্ধান দেয়া।



১৯৫৬।
আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তােমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তােমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তােমার জন্য সাদকাস্বরূপ। তােমার সৎকাজের আদেশ এবং তােমার অসৎকাজ হতে বিরত থাকার নির্দেশ তােমার জন্য সাদকাস্বরূপ। পথহারা লােককে পথের সন্ধান দেয়া। তােমার জন্য সাদকাস্বরূপ, স্বল্প দৃষ্টি সম্পন্ন লােককে সঠিক দৃষ্টি দেয়া তােমার জন্য সাদকাস্বরূপ। পথ হতে পাথর, কাটা ও হাড় সরানাে তােমার জন্য সাদকাস্বরূপ। তােমার বালতি দিয়ে পানি তুলে তােমার ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেয়া তােমার জন্য সাদকাস্বরূপ। সহীহ, সহীহাহ (৫৭২)। ইবনু মাসউদ, জাবির, হুযাইফা, আইশা ও আবু হুরাইরা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আবু যুমাইলের নাম সিমাক, পিতা আল-ওয়ালীদ আল-হানাফী।



১৯৪৯।
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে একজন লােক এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমি খাদিমের অপরাধ কতবার ক্ষমা করব? তার কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন। সে আবার বলল ঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমি খাদিমের অপরাধ কতবার ক্ষমা করব? তিনি বললেনঃ প্রতিদিন সত্তরবার। সহীহ, সহীহাহ (৪৮৮)। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব (তিরমিযীর কোন কোন নােসখায় হাসান সহীহ)। এ হাদীসটি আবূ হানী আল-খাওলানী হতে উক্ত নদে আবদুল্লাহ ইবনু ওয়াহব অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আব্বাসের বাবার নাম জুলাইদ আল-হাজারী আল-মিসরী। কুতাইবা-আবদুল্লাহ ইবনু ওয়াহ্ব হতে, তিনি আবু হানী হতে এই সূত্রে একইরকম বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসটি কয়েকজন বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ ইবনু ওয়াহবের সূত্রে বর্ণনা করেছেন এবং তারা “আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে উল্লেখ কব্রছেন।


 ২০২৭।
আবূ উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লজ্জা-সম্ভ্রম ও অল্প কথা বলা ঈমানের দুইটি শাখা। অশ্লীলতা ও বাকপটুতা (বাচালতা) নিফাকের (মুনাফিকীর) দুইটি শাখা। সহীহ, ঈমান ইবনে আবী শাইবা(১১৮), মিশকাত তাহকীক ছানী(৪৭৯৬) আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা এটিকে আবু গাসান মুহাম্মাদ ইবনু মুতারিরকের হাদীস হিসেবে জেনেছি। বর্ণনাকারী বলেন, ‘আল-আয়ু অর্থ স্বল্পবাক ‘আল-বা-য়ু' অর্থ অশ্লীল ও নির্লজ্জবাক, ‘আল-বায়ান’ অর্থ বাকপটু, বাক্যবাগীশ। যেমন পেশাধারী বক্তারা লম্বা লম্বা বক্তৃতা দিয়ে বেড়ায়, কথার বন্যা দুটিয়ে দেয় এবং বাকপটুতার আশ্রয় নিয়ে মানুষের এমন সব প্রশংসা করতে থাকে, যা আল্লাহ তা'আলা মােটেই পছন্দ করেন না।


 ২০৩৫।
উসামা ইবনু যাইদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ? কাউকে অনুগ্রহ করা হলে সে যদি অনুগ্রহকারীকে বলে, “তােমাকে আল্লাহ তা'আলা কল্যাণকর প্রতিদান দিন” তবে সে উপযুক্ত ও পরিপূর্ণ প্রশংসা করল। সহীহ, মিশকাত (৩০২৪), তা'লীকুর রাগীব (২/৫৫), রাওয়ুন নাযীর (৮)। | আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান, জায়্যিদ (উত্তম) গারীব। এটিকে শুধুমাত্র উক্ত সনদে উসামা ইবনু যাইদ (রাঃ)-এর হাদীস বলে আমরা জানি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুরূপ হাদীস আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। আমি মুহাম্মাদ (বুখারীকে) কে এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি এটি জানেন না বলেছেন। | আব্দুর রহিব ইবনু হাযিম আল বালখী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মাক্কী ইবনু ইবরাহীমকে বলতে শুনেছি, আমরা ইবনু জুরাইজ আল-মাক্কীর নিকট উপস্থিত ছিলাম এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে তার নিকট কিছু চাইল। ইবনু জুরাইজ তার অর্থ সচিবকে বললেন তাকে একটি দীনার দিন। সে বলল, আমার নিকট একটি দীনার ব্যতীত আর কিছু নেই। এটি তাকে দান করলে আমার আপনার পরিবারের সবাইকে উপােস করতে হবে। একথা শুনে তিনি রাগান্বিত হলেন এবং বললেন। তাকে সেটা দাও। মার্কী বলেন, আমরা ইবনু জুরাইজের নিকট থাকাবস্থায়ই এক ব্যক্তি একটি চিঠি এবং একটি থলে নিয়ে উপস্থিত হলেন। যাহা তার কোন ভাই তার নিকট পাঠিয়েছে। চিঠিতে লিখাছিল আমি পঞ্চাশটি দীনার পাঠাইলাম। বর্ণনাকারী বলেন, ইবনু জুরাইজ থলেটি খুলে দীনার গননা করলেন। তাতে তিনি (৫১) একান্নটি দীনার পেলেন। এতে ইবনু জুরাইজ তার অর্থ সচীবকে বললেন তুমি একদীনার দান করেছ, আল্লাহ সেটা তােমাকে ফেরত দিয়েছেন তার সাথে অতিরিক্ত আরাে পঞ্চাশটি দিয়েছেন।


 ২০৩৪।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কাউকে কিছু দান করা হলে পরে তার (দান গ্রহীতার) সংগতি হলে সে যেন এর প্রতিদান দেয়। সংগতি না হলে সে যেন তার প্রশংসা করে। কেননা, যে লােক প্রশংসা করল সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। আর যে তা গােপন রাখল সে অকৃতজ্ঞ হলাে। যে লােক ফর্মা নং-১১ ১৬২ এমন কিছু পাওয়ার ভান করল যা তাকে দান করা হয়নি, সে যেন ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার দুটি পােশাক পরল। হাসান, সহীহাহ (২৬১৭), তা'লীকুর রাগীব (২/৫৫)। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আসমা বিনতু আবী বাক্ ও আইশা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। “মান কাতামা ফাকাদ কাফারা”-এর অর্থ “যে অনুগ্রহ গােপন করল সে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল”।


 ২০৩২।
ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে উঠে চিৎকার দিয়ে বললেনঃ হে ঐ জামা'আত, যারা মুখে ইসলাম কৃকূল করেছ কিন্তু অন্তরে এখনাে ঈমান মজবুত হয়নি! তােমরা মুসলমানদের কষ্ট দিবে না, তাদের লজ্জা দিবে না এবং তাদের গােপন দোষ অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হবে না। কেননা, যে লােক তার মুসলিম ভাইয়ের গােপন দোষ অনুসন্ধানে নিয়ােজিত হবে আল্লাহ তা'আলা তার গােপন দোষ প্রকাশ করে দিবেন। আর যে ব্যক্তির দোষ আল্লাহ তা'আলা প্রকাশ করে দিবেন তাকে অপমান করে ছাড়বেন, সে তার উটের হাওদার ভিতরে অবস্থান করে থাকলেও। বর্ণনাকারী (নাফি) বলেন, একদিন ইবনু উমার (রাঃ) বাইতুল্লাহ বা কা'বার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি কতই না ব্যাপক ও বিরাট! তুমি কতইনা সম্মানি তা কিন্তু তােমার চেয়েও মুমিনের সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহ্ তা'আলার নিকটে অনেক বেশি। হাসান, মিশকাত (৫০৪৪), তা'লীকুর রাগীব (৩/২৭৭)। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা এ হাদীসটি শুধু হুসাইন ইবনু ওয়াকিদের সূত্রেই জেনেছি। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আস-সামারকান্দী-হুসাইন ইবনু ওয়াকিদ হতে একইরকম বর্ণনা করেছেন। আবু বারযা আল-আসলামী (রাঃ)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হতে একইরকম বর্ণিত আছে।


 ২০২৪।
আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, আনসারদের কয়েকজন লােক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে যৎসামান্য সাহায্য প্রার্থনা করল। তাদেরকে তিনি তা দিলেন। তারা আরাে চাইলে তিনি তাদেরকে তা দিলেন। তারপর তিনি বললেন ঃ আমার নিকট যে সম্পদই আছে তােমাদের তা না দিয়ে কখনাে জমা করে রাখি না। যে স্বনির্ভর হতে চায় আল্লাহ তা'আলা তাকে স্বনির্ভর করেন। যে (অপরের নিকট চাওয়া হতে) সংযমী হতে চায় আল্লাহ তা'আলা তাকে সংযমী করেন। যে ধৈর্যশীল হতে চায়, আল্লাহ তা'আলা তাকে ধৈর্যের তাওফীক দেন। ধৈর্যের চেয়ে বেশি কল্যাণকর প্রাচুর্যপুর্ণ কোন সম্পদ কাউকে দেয়া হয়নি। সহীহ, তা'লীকুর রাগীব (২/১১), সহীহ আবু দাউদ (১৪৫১), বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, আনাস (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত | আছে। এ হাদীসটি হাসান সহীহ্। ইমাম মালিকের বর্ণনায় আছে “ফালান আযখারাহু আনকুম”, অর্থ একই (তােমাদেরকে না দিয়ে আমি তা জমা করে রাখি না)।



১৯৩৮।
উম্মু কুলসুম বিনতু উকবা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি ঃ যে ব্যক্তি লােকদের মাঝে সংশােধন করার চেষ্টা করে সে মিথ্যাবাদী নয় । সে (যা বলেছে) ভাল বলেছে অথবা ভালকাজের অগ্রগতি ঘটিয়েছে। সহীহ, রাওযুন নাযীর (১১৯৬), সহীহাহ (৫৪৫), মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।


 ১৯৩৫।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তােমরা একজন অন্যজনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করাে না, পরস্পরে শত্রুতা পােষণ করাে না, পরস্পরকে ঘূনা করাে না, পরস্পর হিংসা করাে না, বরং আল্লাহ তা'আলার বান্দাহগণ! পরস্পর ভাই হয়ে থেকো। কোন মুসলমান ব্যক্তির পক্ষেই বৈধ নয় তার ভাইকে তিনদিনের অধিক সময় ধরে ত্যাগ করে থাকা। সহীহ ইরওয়া (৭৯৩), বুখারী, মুসলিম। | আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবু বকর সিদ্দীক, যুবাইর ইবনুল আওয়াম, ইবনু মাসউদ, ও আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।


 ১৯৩৬।
সালিম (রাহঃ) হতে তার বাবার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শুধু দুই। প্রকারের লােকই হিংসাযােগ্য। (এক) যে লােককে আল্লাহ তা'আলা ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং সে তা হতে দিন-রাত আল্লাহ্ তা'আলার। পথে ব্যয় করে। (দুই) যাকে আল্লাহ তা'আলা কুরআনের জ্ঞান দিয়েছেন এবং সে দিন-রাত এর বাস্তবায়নে নিযুক্ত থাকে। সহীহ, রাওযুন নাযীর (৮৯৭), বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্। ইবনু মাসউদ ও আবু হুরাইরা (রাঃ)-এর বরাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।



১৯৩৭।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নামায আদায়কারীরা কখনাে শাইতানের পূজা করবে (সাজদা দিবে) এ বিষয়ে সে নিরাশ হয়ে গেছে। কিন্তু সে তাদের মধ্যে একজনকে অন্যজনের বিরুদ্ধে উস্কানি দিতে নিরাশ হয়নি। সহীহ, সহীহাহ (১৬০৬), মুসলিম। আনাস ও সুলাইমান ইবনু আমর ইবনু আহওয়াস (রাঃ) হতে তার পিতার সূত্রে এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবু সুফিয়ানের নাম তালহা, পিতা নাফি।



 ১৯৩৯।
আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনটি ক্ষেত্র ব্যতীত মিথ্যা বলা বৈধ নয়। (এক) স্ত্রীকে খুশি করার উদ্দেশ্যে তার সাথে স্বামীর কিছু বলা, (দুই) যুদ্ধের সময় এবং (তিন) লােকদের পরস্পরের মাঝে সংশােধন করার জন্য মিথ্যা কথা বলা। অধঃস্তন রাবী মাহমূদ তার হাদীসে বলেছেন, তিনটি ক্ষেত্র ব্যতীত অন্য কোথাও মিথ্যা বলা ঠিক নয়। সহীহ, সহীহাহ (৫৪৫), মুসলিম। “স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য এই অংশ ব্যাতীত হাদীসটি অনুরূপ বর্ণনা করেছেন উম্মু কুলসূম হতে। এ হাদীসটি হাসান। ইবনু খুসাইমের সূত্র ব্যতীত আসমা (রাঃ) বর্ণিত এ হাদীস আমরা অন্য কোন সূত্রে অবহিত নই। দাউদ ইবনু আবু হিন্দ-শাহর ইবনু হাওশাবের বরাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে আসমা (রাঃ)-এর উল্লেখ নেই। মুহাম্মাদ ইবনুল আলা-ইবনু আবূ যাইদা-দাউদ সূত্রে উক্ত হাদীস আমার নিকট এ রকম বর্ণনা করেছেন। এ অনুচ্ছেদে আৰূ বা (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে।


Post a Comment

0 Comments